রাখি পূর্ণিমা: ভাই-বোনের ভালোবাসার বন্ধনে এক বিশেষ দিন
রাখি পূর্ণিমা—যা রক্ষা বন্ধন নামেও পরিচিত—ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম আবেগঘন উৎসব। এই দিনে ভাই ও বোনের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ এবং সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি নতুন করে উদযাপন করা হয়। রাখি পূর্ণিমা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি আবেগ, একটি সামাজিক রীতি যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান।
রাখি পূর্ণিমা কবে পালিত হয়?
প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। ২০২৫ সালে রাখি পূর্ণিমা পড়েছে ৯ই আগস্ট, শনিবার।
রাখির অর্থ ও মাহাত্ম্য
‘রক্ষা’ মানে সুরক্ষা এবং ‘বন্ধন’ মানে বন্ধন বা সম্পর্ক। এই দিন বোনেরা ভাইয়ের কব্জিতে রাখি বেঁধে তার মঙ্গল ও সুস্থতা কামনা করে, আর ভাই তার বোনের প্রতি আজীবন রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
রাখি কেবল রক্তের সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়। যেসব ভাইবোন একে অপরের আত্মার আত্মীয়—তাদের সম্পর্কেও এই উৎসব সমানভাবে প্রযোজ্য।
রাখি পূর্ণিমার ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনি
রাখি উৎসবের সূচনা প্রাচীন কালের নানা কাহিনি ও ধর্মীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত। যেমন—
দ্রৌপদী ও শ্রীকৃষ্ণ: একটি গল্প অনুসারে, কৃষ্ণ আহত হলে দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির পাড় ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। তার বদলে কৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেন দ্রৌপদীকে সবসময় রক্ষা করবেন।
রানি কর্ণাবতী ও হুমায়ুন: রাজপুত রানি কর্ণাবতী মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়েছিলেন নিজের রাজ্য রক্ষার অনুরোধে। হুমায়ুন সেই রাখির মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন।
এইসব কাহিনি আজও রাখি উৎসবকে একটি গভীর ঐতিহ্য ও আত্মিক সংযোগের প্রতীক করে তোলে।
রাখি কেবল রক্তের সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়। যেসব ভাইবোন একে অপরের আত্মার আত্মীয়—তাদের সম্পর্কেও এই উৎসব সমানভাবে প্রযোজ্য।
রাখি উৎসবের নিয়ম ও রীতি
রাখি পূর্ণিমার দিন সকালে স্নান করে পুজোর জন্য প্রস্তুত হওয়া হয়। এরপর বোনেরা ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে তিলক ও আরতি দেয়, মিষ্টি মুখ করায়, এবং তার মঙ্গল কামনা করে। ভাই উপহার দিয়ে বা নগদ অর্থ দিয়ে বোনকে আশীর্বাদ ও আনন্দ দেয়
রাখি উপলক্ষে উপহার দেওয়ার প্রচলন
বোনেরা আজকাল ভাইদেরও উপহার দেয়। অন্যদিকে ভাইয়েরা সাধারণত—
কসমেটিকস, জামা-কাপড়
গিফট কার্ড বা টাকা
গহনা বা স্মারক উপহার দেয়।
ছোট বোনের জন্য চকোলেট, খেলনা বা বই বেশ জনপ্রিয় উপহার।
আধুনিক যুগে রাখির বিস্তার
বর্তমানে রাখি পূর্ণিমা শুধুমাত্র ভারতেই নয়, বাংলাদেশ, নেপাল এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় পরিবারগুলোতেও পালিত হয়। অনেক মানুষ এখন রাখি ডাকযোগে পাঠায় কিংবা ভার্চুয়ালি রাখি উৎসব উদযাপন করে।
কসমেটিকস, জামা-কাপড়
গিফট কার্ড বা টাকা
গহনা বা স্মারক উপহার দেয়।
ছোট বোনের জন্য চকোলেট, খেলনা বা বই বেশ জনপ্রিয় উপহার।
রাখি শুধু ধর্ম নয়, সম্পর্কের প্রতীক
অনেকেই মনে করেন রাখি একটি হিন্দু ধর্মীয় রীতি। যদিও এটি মূলত হিন্দুদের উৎসব, কিন্তু এর চেয়ে বড় সত্য হলো—এই উৎসব মানুষের ভালোবাসা, আস্থা এবং আত্মিক বন্ধনের একটি বহিঃপ্রকাশ। ধর্ম ছাপিয়ে রাখি এখন সম্পর্কের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
রাখি পূর্ণিমা এমন একটি দিন, যা ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে। ভালোবাসা, বিশ্বাস ও সুরক্ষার অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা এই উৎসব আজও আমাদের জীবনে এক গভীর অনুভূতির জন্ম দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎসব পালনের ধরন বদলালেও তার মানে আজও অটুট।
ভাইয়ের কব্জিতে বাঁধা একটি ছোট রাখি যেন বলে দেয়—“আমি আছি, সবসময় পাশে।”